শনিবার ১ নভেম্বর ২০২৫ - ১২:১৫
আহলে বাইতের উত্তরাধিকার: হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন থেকে আজকের নারীদের শিক্ষা

হাওজা নিউজ এজেন্সিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন  হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা হায়দার আলী (পেশ ইমাম নারিকেল বেড়িয়া, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত)

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,


সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
মাওলানা সাহেব, আপনাকে ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। আজকের আলোচ্য বিষয় হল “আহলে বাইতের উত্তরাধিকার: হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন থেকে আজকের নারীদের শিক্ষা” — একটি গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথমেই জানতে চাই, হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবনকে কেন “আহলে বাইতের উত্তরাধিকার”-এর প্রতীক বলা হয়?

মাওলানা হায়দার আলী:
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
ধন্যবাদ। আসলে হজরত ফাতিমা (সা.) শুধু একজন কন্যা, স্ত্রী বা মা নন-তিনি আহলে বাইতের আত্মিক ও নৈতিক উত্তরাধিকারের কেন্দ্রবিন্দু। নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষার বাস্তব প্রতিফলন আমরা তাঁর জীবনেই দেখতে পাই। তাঁর চরিত্র, ধৈর্য, ইবাদত ও ন্যায়বোধ আহলে বাইতের মূল মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি। তাই বলা হয়, আহলে বাইতের উত্তরাধিকার শুধু রক্তের নয়, বরং আদর্শ ও চরিত্রের ধারাবাহিকতা — যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হজরত ফাতিমা (সা.)।

আজকের আধুনিক সমাজে, বিশেষ করে নারীদের জন্য, হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন কতটা প্রাসঙ্গিক বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা হায়দার আলী:
অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বর্তমান যুগে নারী নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে-পরিবার, সমাজ, কাজ, ধর্মীয় জীবন সবখানেই ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন। হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন আমাদের শেখায় কীভাবে আত্মসম্মান, দায়িত্ববোধ ও ঈমানের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। তিনি ছিলেন জ্ঞানে পরিপূর্ণ, সমাজসচেতন, তবুও বিনয়ী ও পরিবারকেন্দ্রিক। আজকের নারী যদি তাঁর আদর্শ থেকে প্রেরণা নেয়, তবে সে হবে একাধারে দৃঢ়, ন্যায়পরায়ণ ও আত্মবিশ্বাসী মুসলিমা।

অনেকে মনে করেন, ধর্মীয় নারী আদর্শ মানে শুধুই গৃহিণী হওয়া। হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবনে আমরা কী ভিন্ন দৃষ্টান্ত দেখতে পাই?

মাওলানা হায়দার আলী:
খুব ভালো প্রশ্ন। হজরত ফাতিমা (সা.) ছিলেন গৃহিণী-কিন্তু কেবল ঘরের সীমায় আবদ্ধ ছিলেন না। তিনি সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছেন, ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এমনকি রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, একজন নারী ধর্ম, সমাজ ও পরিবার-তিন ক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিতে পারেন, যদি তাঁর মধ্যে ঈমান ও জ্ঞানের ভিত্তি মজবুত থাকে।

আজকের নারীরা যে আত্মপরিচয় ও অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করছেন, সেই প্রেক্ষিতে হজরত ফাতিমা (সা.) কী বার্তা দেন বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা হায়দার আলী:
তিনি শেখান যে, আত্মপরিচয় মানে শুধুমাত্র সামাজিক অবস্থান নয়-বরং আত্মিক মর্যাদা ও নৈতিক দৃঢ়তা। হজরত ফাতিমা (সা.) নিজের সম্মান ও সত্যের পক্ষে কখনো আপস করেননি। তিনি নারীর মর্যাদাকে ঈমানের আলোয় সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাই আজকের নারীরাও যদি তাঁর থেকে শিক্ষা নেয়, তবে তারা নিজেদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি সমাজে ন্যায়ের ভিত্তিতে নেতৃত্ব দিতে পারবে।

শেষ প্রশ্ন, মাওলানা সাহেব-আপনি যদি এক বাক্যে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর জীবন থেকে নারীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বলতে চান, সেটি কী হবে?

মাওলানা হায়দার আলী:
এক বাক্যে বললে-আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে আত্মমর্যাদা ও ন্যায়ের সঙ্গে জীবনযাপনই হজরত ফাতিমা (সা.)-এর প্রকৃত শিক্ষা।

চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য ধন্যবাদ, মাওলানা সাহেব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হজরত ফাতিমা (সা.)-এর আদর্শে জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: হাসান রেজা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha